আবহাওয়া: আগস্ট মাসে ভারী বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। একইসঙ্গে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদফতরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। গত ২ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
বিশেষজ্ঞ কমিটির চলতি মাসের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগস্ট মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আগস্ট মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমী লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রধান নদনদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে জানিয়ে পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, পরবর্তী সময়ে মৌসুমী ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
জুলাই মাসে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে।’
জুলাইয়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি ছিল বলেও জানান আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক।
আবহাওয়ার আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে জুলাই মাসের অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ১ ও ২ জুলাই সারাদেশে মাঝারি ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ২৭ থেকে ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়। এ সময় এ মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৩২৮ মিলিমিটার টেকনাফে (২৭ জুলাই) রেকর্ড করা হয়। অতিভারী বৃষ্টিজনিত কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হয়।
এতে আরও বলা হয়, গত ১১ জুলাই সকাল ৬টায় পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তী সময়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ১৩ জুলাই মৌসুমী অক্ষের সাথে মিলিত হয়।
২২ জুলাই সকাল ৬টায়ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ২৩ জুলাই সকাল ৬টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি পরবর্তী সময়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ২৪ জুলাই ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও কাছাকাছি এলাকায় প্রথমে লঘুচাপে পরিণত হয় এবং আরও দুর্বল হয়ে মৌসুমী অক্ষের সাথে মিলিত হয়।
২৭ জুলাই সকাল ৬টায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় আরও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ২৮ জুলাই সকাল ৬টায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ২৯ জুলাই দুপুর ১২টায় খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়।
এরপর এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ৩০ জুলাই ভারতের বিহার এলাকায় অবস্থান নেয় এবং আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ৩১ জুলাই ভারতের উত্তর প্রদেশ এলাকায় অবস্থান করে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।